1. live@bntv24live.com : BN TV 24LIVE : BN TV 24LIVE
  2. info@www.bntv24live.com : BN TV 24LIVE :
সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:২৩ পূর্বাহ্ন

কুমিল্লায় থানা পুলিশের সহায়তা না পেয়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে ভুক্তভোগীর আত্মহত্যা।

প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত: শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫
  • ১১ বার পড়া হয়েছে

ডেক্স রিপোর্ট

কুমিল্লার চান্দিনায় থানা পুলিশের সহায়তা না পেয়ে সবুজ (৩৩) নামে এক ভুক্তভোগী অটো চালক নিজ শরীরে পেট্রোল ঢেলে আত্মহত্যা করার ঘটনা ঘটেছে। গত রবিবার (১৩ এপ্রিল) সন্ধা আনুমানিক ৭টার সময় উপজেলা হসপিটাল সংলগ্ন এলাকায় নিজ গায়ে পেট্রোল ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন সবুজ নামে এক ভুক্তভোগী। এসময় স্থানীয়রা গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা হসপিটালে নিলে পরে রোগীর অবস্থা অবনতি হতে থাকলে ওই দিনই রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হসপিটালে নেওয়া হয় তাকে। পরে টানা ৫ দিন জীবনের সাথে যুদ্ধ করে আজ শুক্রবার সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অবশেষে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

নিহত সবুজ চান্দিনা থানাধীন বাড়েরা ইউনিয়নের গড়ামারা গ্রামের আমির হোসেনের একমাত্র ছেলে। সে চান্দিনা উপজেলা পৌরসভার বেলাশ্বর এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করে ব্যাটারি চালিত অটো গাড়ি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। আর নিহত সবুজের বাবা চট্টগ্রামে একটি ভাড়া বাসায় থেকে ভাড়ায় সিএনজি গাড়ি চালিয়ে স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে কোন রকমে জীবিকা নির্বাহ করতেন।

ঘটনার সূত্র, গত বছরের ৭ ডিসেম্বর চান্দিনা পৌর এলাকায় একটি গ্যারেজ থেকে রাত অনুমান সাড়ে ৩ ঘটিকার সময় গ্যারেজের তালা ভেঙ্গে ২টি অটো গাড়ি চুরি হয়। এ ঘটনায় স্থানীয়রা ৩ জনকে (মানিক, নাজমুল ও সাইফুল) আটক করে থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। এ সময় রহিমা বেগম একটি লিখিত অভিযোগ দিলেও পরে থানা পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা না নিয়ে স্থানীয় বাদল নামে এক ব্যাক্তির জিম্মায় অভিযুক্তদের দিয়ে সামাজিকভাবে সমাধান করতে বলেন। তাতে কোন সমাধান না করে উল্টো বাদল নামে ওই ব্যক্তি ভুক্তভোগী রহিমা বেগমকে ৫০ হাজার টাকা দিতে চাপ দেয়।

এ ঘটনায় আইনি সহায়তা চেয়ে গত ৮ জানুয়ারি জেলা পুলিশ সুপার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ (১১৫/m) দেন ভুক্তভোগী রহিমা বেগম। এতেও কোন প্রতিকার না পাওয়াই ভুক্তভোগী রহিমা বেগম সহায়তা চেয়ে সাংবাদিকের শরণাপন্ন হয়। এতে ঘটনার প্রায় তিন মাস পর গত ৪ মার্চ থানা পুলিশ চুরির মামলা নিতে বাধ্য হন। এতে অভিযুক্ত মানিক, নাজমুল ও সাইফুল নাম উল্লেখ করে আরো ৮-১০জনকে অজ্ঞাত করে রহিমা বেগম বাদী হয়ে থানায় মামলা (মামলা নং- ০৬) করেন। মামলা রুজু হওয়ার দেড় মাস অতিবাহিত হলেও থানা পুলিশ কাউকে আটক করেনি। এমনকি চোরাইকৃত কোন মামামাল উদ্ধারও করতে পারেনি পুলিশ। উল্টো মামলার আসামিরা গত বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) বাদী রহিমার বাসায় গিয়ে স্বামী আবুল হাশেমকে মারধর করে ভয়ভীতি দেখিয়ে মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়।

আর এ মামলায় বাদী রহিমা বেগমকে নিজ অটো গাড়ি যোগে বিভিন্ন জায়গায় আনা নেওয়া ও মামলায় সহায়তা করে আসছিলো নিহত সবুজ। এ ঘটনায় গত রবিবার (১৩ এপ্রিল) বিকেলে স্থানীয় সালাউদ্দিন ও হারুনের নেতৃত্বে কয়েকজন ব্যাক্তি চান্দিনা থানাধীন উপজেলা মেডিকেল সংলগ্ন এলাকায় নিহত সবুজকে আটক করে মারধর করে জোরপূর্বকভাবে তার অটো গাড়ি (যার আনুমানিক মূল্য ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা) ছিনিয়ে নেয়। এ সময় তাকে সেই চুরির ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অপবাদ দিয়ে ও নানা ধরণের ভয়ভীতি দেখিয়ে ৫০ হাজার টাকা দিতে চাপ দেন তারা। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী সবুজ তাৎক্ষনিকভাবে স্থানীয়দের সাথে যোগাযোগ করে কোন সহযোগিতা না পাওয়ায় ওই দিন সন্ধায় আইনগত সহায়তা নিতে থানায় যান তিনি।

কিন্তু এ ঘটনায় থানা পুলিশের কোন সহায়তা না পাওয়ায় সন্ধা ৭টার সময় ঘটনাস্থলে এসে নিজ গায়ে পেট্রোল ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ভুক্তভোগী সবুজ। এ ঘটনায় চান্দিনা উপজেলা মেডিকেলে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ঢাকা মডিকেল কলেজ হাসপাটালের বার্ন ইউনিটিতে নেওয়া হয় তাকে। আর এ ঘটনায় ভিকটিম সবুজকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের আইসিইউতে রেখে ৫৭ বছর বয়সী বাবা আমির হোসেন গত বুধবার (১৬ এপ্রিল) সন্ধা ৭টার সময় কুমিল্লার চান্দিনা থানায় যান মামলার এজাহার দিতে। কিন্তু থানা পুলিশ তাকে ১ ঘন্টা ডিউটি অফিসারের রুমে নানা অজুহাতে বসিয়ে রেখে মামলা না নিয়ে রাত ৮টার সময় ফিরিয়ে দেন এবং পরে রিলাক্সে আসার জন্য বলেন।

এ বিষয়ে নিহত সবুজের স্ত্রী খুশি আক্তার জানান- গরীবের জন্য আইন নাই! বিচার নাই! তারা (মাতাব্বররা) চোর ধরে ছেড়ে দিছে। আর আমার স্বামীরে চুরির অপবাদ দিয়ে জরিমানা করে! আমার স্বামী এই নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে নিজের গাঁয়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যা করে। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। আর এ ঘটনায় নিহত সবুজের বাবা আমির হোসেন জানান- থানা পুলিশের অবহেলায় আমার ছেলের আজ এ অবস্থা। গরীবের জন্য আসলে আইন নেই! কার কাছে বিচার দেবো?

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চান্দিনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. জাবেদ উল ইসলামকে বুধবার রাতে ফোন দেওয়া হলে তিনি জানান- এটা কি মামলা করবে? সে তো মারা যায়নি। সে বেঁচে থাকলে তার বিরুদ্ধে মামলা হবে। আর যদি সে মারা যায় তাহলে তার পরিবার মামলা করতে পারে। এখানে আইনি জটিলতা আছে। এ ঘটনায় তা হলে আইনি পদক্ষেপ কি সাংবাদিক জানতে চাইলে তিনি বলেন- তার যদি অটো গাড়ি নিয়ে যায় এবং মারধর করে, সেক্ষেত্রে অভিযোগ দিতে পারে একটা। এসময় সাংবাদিককেই উদ্দেশ্য করে থানায় অভিযোগ দিতে বলেন ওসি। এসময় ভিকটিমের পরিবার থানায় গেলে দীর্ঘ সময় ডিউটি অফিসার সাজ্জাদ বসিয়ে রেখে ফেরত পাঠিয়েছেন জানালে ওসি সাংবাদিককে উদ্দেশ্য করে আবারো বলেন- একটা অভিযোগ পাঠিয়ে দিয়েন, পাঠিয়ে দিয়ে ডিউটি অফিসারের কাছে এসে আমাকে ফোন দিতে বলিয়েন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট
error: Content is protected !!